সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০

এর নাম কি ইসলাম?

ধইরালা,কাইট্টালা,মাইরালা,জবাই কর,তুই বেদাতি, তুই মাজার পূজারী,তুই শিন্নী খোর-ইসলামে শিন্নী নিষেধ, তুই জিলাপি খোর-জিলাপি খাওয়া বেদাত -এসবের জিকির করার নামই কি ইসলাম?

আবু হুরাইরা(রা) হতে বর্ণিত,রাসূল(স) ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ-সরল।দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বীন তার উপর বিজয়ী হয়।কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং (মধ্যপন্থার) নিকটবর্তী থাক, আশান্বিত থাক এবং সকাল-সন্ধায় ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদতের মাধ্যমে) সাহায্য চাও।
[ সূত্রঃসহিহ বোখারী(ই.ফা) ,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-৩১,হাদিস নং-৩৮]

মসজিদ ভাঙ্গা আর মুসলমানদের হত্যা করার নামই কি ইসলাম?

মুখে বেদাত, শিরিকের জিকির করে যারা ফেনা তুলে তারাই সাহাবিদের মাজার গুলো ভেঙ্গে ফেলেছিল।তারাই প্রিয় নবীজী(স) এর রওজা মোবারক ভেঙ্গে ফেলার চক্রান্ত করেছিল,তারা আজও মাজার শরীফ গুলোতে গুপ্ত হামলার মাধ্যমে বোমাবাজি করে,মাজার শরীফ ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দেয়।এই গুপ্ত হামলার সহিহ দলিল কোথায়?বোমাবাজি করাকে কি তারা সুন্নত বলবে(নাউজুবিল্লাহ) নাকি এই বোমাবাজিও একটি নোংরা বেদাত?তারা বোমা মেরে আল্লাহর ঘর মসজিদ গুলো ভেঙ্গে ফেলছে আর নাম ব্যবহার করছে ইসলামের। সারা পৃথিবীতে মুসলমানদের পরিচয় দিয়েছে সন্ত্রাসী হিসেবে। এর নাম কি ইসলাম?বেদাত নিষিদ্ধ। তবে ইসলামের নামে, জিহাদের নামে এই সকল নোংরা বেদাত গুলো কি নিষিদ্ধ নয়? নবীজীকে সালাম দিলে,নবীজীর উপর দরুদ পড়লে "তুই বেদাতি" আর বোমা মেরে মুসলমানদের হত্যা করলে,মসজিদ ভাংলে "ও সাচ্চা ইসলাম হে"!! বাহ মুসলমান, বাহ! এর নামই কি ইসলাম?

নবীজীর শানে বর্ণিত হাদিস গুলোকে অস্বীকার করা, লুকিয়ে রাখা,জাল হাদিস বলা,কেবল তৌহিদের কথা বলে রেসালাতকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া -এসবের নামই কি ইসলাম?


আহলে বাইতের ব্যাপারে চুপ থাকা।আহলে বাইতের শানে বর্ণিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস শরীফ গুলো বর্ণনা না করা,নবীজী(স) সকল মুসলমানদের কাছে যে বিনিময় চেয়েছেন তা রক্ষা না করার নামই কি ইসলাম?

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,
"হে মাহবুব! আপনি বলে দিন, আমি এ (পথ প্রদর্শন ও ধর্ম প্রচার)'র বিনিময়ে তােমাদের নিকট হতে আমার আহলে বাইত এর ভালােবাসা ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চাই না।
                        [সূরা শুরা-২৩] "


যে নজদের প্রতি নবী করিম(স) অভিশাপ দিয়েছেন এবং নজদ থেকে শয়তানের শিং বেরুবে বলেছেন, সেই নজদ থেকে উথিত ধর্ম মতের অনুসরণ করার নামই কি ইসলাম? 

    শয়তানের শিং সম্পর্কিত
হাদীসঃ
যারা ইহুদি খ্রিস্টানদের সাথে আতাত করে চলে তাদের চাপিয়ে দেওয়া ধর্ম মতের অনুসারী হওয়াই কি ইসলাম?কথায় কথায় সেই সৌদির হাইকোর্ট দেখানো যারা মূলত আমেরিকা ও ইজরায়েলের পা চাঁটা গোলাম-সেই সৌদির অনুসরণে ধর্ম পালন করাই কি ইসলাম?হ্যা, আরবে নবী করিম(স) এর জন্ম। কিন্তু রাসূল(স) জাহেরীভাবে আগমনের পর ১৪ টি শতাব্দী পেরিয়ে গেছে এবং ১২ টি শতাব্দী পর্যন্ত এই আরবে ইসলামের যেই রুপরেখা ছিল তা গলা টিপে হত্যা করার সমস্ত আয়োজন যে বর্তমান সৌদি আরব করেছে এবং করছে সেই কথা কি ভুলেও একবার মনে উদয় হয় না?সহিহ হাদিস আর বেদাত শিরিকের জিকির করে শত বেদাতে লালিত মিথ্যুকদের মিথ্যার বন্যায় ইসলামকে কলুষিত করার যে চক্রান্ত চলছে,অন্তরালে তার কলকাটি নাড়ছে ইহুদিরা।তবুও মুসলমান আগুনকে অমৃত ভেবে উইপোকার মতো ঝাপিয়ে পরছে আগুনে।

শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০

মাজার পূজারী

শব্দ যুদ্ধের অস্ত্র-"মাজার পূজারি"
◆━━━━━━◆❃◆━━━━━━◆
◆━━━━━━◆❃◆━━━━━━◆



 

 💧আমরা পবিত্র ক্বাবা শরীফের দিকে মুখ করে সিজদা করি।আমরা কি ক্বাবা শরীফের পূজা করি নাকি আল্লাহর ইবাদত করি? 

 💧হাজরে আসওয়াদ পাথরে চুম্বন করে আমরা কি পাথর পূজা করি নাকি আল্লাহর ইবাদত করি? 

 💧লাইলাতুল নিফসি মিন সাবানের রাত্রিতে হুজুর আকরাম(স) সাহাবিদের কবরের পাশে গিয়ে দোয়া করেছিলেন(সূত্রঃবোখারী শরীফ)।এটা কি করব পূজা(নাউজুবিল্লাহ) নাকি ইসলামিক ইবাদত? 

 💧ক্বাবা শরীফের আশেপাশে অনেক নবী(আ) গনের রওজা শরীফ রয়েছে।আমরা কি মক্কায় হজ্জ করতে যাই নাকি মাজার পূজা ও কবর পূজা করতে যাই?

আমরা কখনো মাজার শরীফের ইবাদত করতে মাজার শরীফে যাই না।আমরা মাজার জিয়ারত করতে যাই।আল্লাহর অলির উছিলায় আল্লাহর কাছে চাই। উছিলাকে আল্লাহ পাক নিজেই পবিত্র কোরআনে হালাল করেছেন।যারা উছিলা অস্বীকার করে তারা মূলত পবিত্র কোরআনকেই অস্বীকার করে। আর যারা কোরআনকে অস্বীকার করে তারা আল্লাহকেই অস্বীকার করে।যারা উছিলা অস্বীকার করে তারা তাদের মা বাবাকে অস্বীকার করে।কেননা মা বাবার উছিলায় আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন।তাই আল্লাহর অলিদেরকে ভালোবেসে উনাদের মাজারে জিয়ারত করতে গেলে মাজার পূজা হয় না,যেমনি ভাবে ক্বাবা শরীফে জিয়ারত করলে ক্বাবার পূজা হয় না, হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করলে পাথর পূজা হয় না।ক্বাবার আশেপাশে অনেক নবী(আ) গনের রওজা থাকা সত্বেও সেখানে সিজদার কারনে মাজার পূজা হয় না। মাজার পূজা কেবলই শব্দ যুদ্ধের একটি অস্ত্র। কারন ওহাবি ফেরকা যখন ওহাবি নামের যাতাকলে পিষ্ট, তখন নিজেদের অন্তরের প্রশান্তি ও ওহাবি নামকে পর্দার অন্তরালে নেয়ার অস্ত্র হিসেবে কোরআন সুন্নাহ বিরোধী অস্ত্র হিসেবে তারা মাজার পূজারী শব্দটিকে চয়ন করে নিয়েছে।তাদের কামনা বাসনা হলো যাদের মাধ্যমে আমরা ইসলাম পেয়েছি "মাজার পূজারী" শব্দের ইয়াজিদী অস্ত্র দ্বারা ওই সমস্ত ইসলাম প্রচারক আউলিয়া কেরাম থেকে আমাদেরকে দূরে সরানো।ইয়াজিদ পূজারী এই সকল লোক থেকে আল্লাহ পাক আমাদের ঈমান ও আমলকে রক্ষা করুক।

ইসলামিক ছবি


বেদাতি

বেদাতের ঝান্ডা হাতে আমি খুঁজে ফিরি শত শত বেদাতিঃ
             ─━━━━━━⊱✿⊰━━━━━━─
                 ─━━━━━━⊱✿⊰━━━━━━─
                      ─━━━━━━⊱✿⊰━━━━━━─




   আমি বেদাতি, আপনি বেদাতি তো?

   আমি বেদাতের সমর্থন করি,আপনি করেন তো?

    টাকার বিনিময়ে কন্ট্রাক্ট করে ওয়াজ করা নবী করিম(স) এর সুন্নত নয়।এটা সমাজের মোল্লা মুন্সিদের বেদাত।আমি সেই মুন্সিদের বেদাত সমর্থনকারী।আমি দাতা হয়ে সেই বেদাতের অংশীদারও বটে।

     আমি মাদ্রাসার ছোট বাচ্চাদের নিয়ে টাকা তোলার জন্য বের হই।এটা নবীর সুন্নত নয়, বরং বেদাত।

     আমি করুন সুরে মাইক নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় টাকা চাই। এটা নবীর সুন্নত নয়, বরং বেদাত।

     আমি ডক্টরেট,মুফতি,আল্লামার টাইটেল পকেটে নিয়ে ঘুরি।এই টাইটেল নবীজীর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় না,সাহাবিদের ক্ষেত্রেও না।এটি একটি বেদাত।তাই আমি বেদাতি। 

     আমি ওয়াজ করতে গিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য হেলিকপ্টারে ঘুরি।এটা নবীজী(স) এর সুন্নত নয়, বরং বেদাত। 

     আমি এসির বাতাসে মনোরম পরিবেশে পাকা দালান ঘরে নামাজ পড়ি।এটা নবীজী(স) এর সুন্নত নয়, বরং বেদাত।তাই আমি বেদাতি।

     আমি ফেসবুকের মুফতি,আমি ইউটিউবের বাদশা,গুগল শায়েখ।টাকা দিয়ে আমার ওয়াজ নসিহত প্রমোট করি।এটা নবীজি(স) এর সুন্নত নয়, বরং বেদাত। আমি একজন বেদাতি। 

     আমি মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুদের বেত্রাঘাতে জর্জরিত করি।এটা নবীজী(স) এর সুন্নত নয়। এটা বেদাত।তাই আমি বেদাতি। আপনি বেদাতি তো? 

     আমি বোখারী শরীফ,মুসলিম শরীফকে বেশি বিশ্বাস করি। এটা না লিখেছেন নবীজী(স),না লিখেছেন সাহাবায়ে কেরাম।আমাদের ধর্মের পূর্ব পুরুষ তথা বাপ দাদারাই লিখেছেন এই কিতাব। আমি সেই বাপ দাদার কিতাবের অনুসারী।তাই আমি বেদাতি। আপনি বেদাতি তো?

      মোল্লা মুন্সি স্টেজে উঠলে আমি স্লোগানে মুখরিত করি।আবার নবীর নামে স্লোগান দিলে তথাকথিত মোল্লা মুন্সির বক্তব্যে আমি বেদাতি হয়ে যাই।হ্যা ভাই,আমি বড় বেদাতি। 

সমকামিতার সার্টিফিকেটধারীরা আজ ঘুরে ফিরে গাট্টিতে বেদাতের সার্টিফিকেট নিয়ে।সমকামীদের স্লোগান আজ,

    "একটা একটা বেদাতি ধর,
     ধইরা ধইরা জবাই কর।"

আমি বলবো, তবে আগে নিজের গলায় ছুড়ি চালাও।তবুও সমকামিতার বিচার বাকি থাকবে।

ওহাবি কি?

ওহাবি কাকে বলে? 





  ওহাবিকে বহু ভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। তবে আমার কাছে মনে হয়,

"যারা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে তাদেরকে ওহাবি বলে।"

বিশ্লেষণঃধর্মে নতুনত্ব হলো বেদায়াত।রাসূল(স) এর ওফাতের ১২৫০ বৎসর পরে কোরআন ও হাদিসের বিকৃত ব্যাখ্যা সহ যে মতবাদের উদ্ভব হয় সেটিই হলো ওহাবি ফেরকা।নিঃসন্দেহে ১২৫০ বৎসর পরে সৃষ্ট হওয়ায় এটি একটি নতুন ফেরকা তথা বেদায়াতি ফেরকা। তারা যে বেদায়াতি ফেরকা তা আড়াল করার জন্য হক্বপন্থীদেরকে তারা উল্টো বেদায়াতি বলে ডাকে।একটা মিথ্যা বার বার বলতে বলতে কোন এক সময় ঐ মিথ্যাটাই অনেক মানুষ সত্য হিসেবে ধরে নেয়।ওহাবিরা ঠিক এই কৌশলটাকেই কাজে লাগাচ্ছে।  চোরের মায়ের বড় গলা বলে একটা কথা আছে। সেই কথাটির শত ভাগ প্রতিফলন হলো ওহাবিদের শব্দ যুদ্ধের ব্যবহৃত এই ডায়লগ। এ যেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার এক নিরলস প্রচেষ্টা।

উছিলা বা মাধ্যম


মাধ্যম বা উছিলাঃ
∴━━━✿━━━∴




❏নবী করিম(স) এর উছিলায় আমরা ইসলাম পেয়েছি। 

❏আল্লাহ পাক সত্য ধর্মকে দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সকল নবী রাসূলগনকে মাধ্যম বা উছিলা বানিয়েছেন। 

❏হযরত আদম(আ) ও মা হাওয়া(আ) এর উছিলায় মানব জাতির সূচনা হয়েছে। 

❏সাহাবীগনের উছিলায় বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচার হয়েছে। 

❏আল্লাহ পাক হযরত শাহজালাল(রহঃ) সহ অনেক অলি আউলিয়াকে বাংলার জমিনে ইসলামের আলো পৌঁছে দেয়ার উছিলা বানিয়েছেন। 

❏আল্লাহ পাক হযরত খাজা মঈনউদ্দীন হাসান চিশতি আজমেরী সঞ্জেরী(রহঃ) কে ভারতের জমিনে ইসলাম প্রচারের মাধ্যম বা উছিলা বানিয়েছেন। 

❏আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু দুনিয়ায় প্রেরণের জন্য মা বাবাকে উছিলা বানিয়েছেন। 

❏আল্লাহকে পাবার জন্য ইবাদত করতে হয়।এটিও একটি মাধ্যম বা উছিলা। 

❏ইবাদতের জন্য পবিত্র ক্বাবা শরীফকে আল্লাহ পাক অধিক পছন্দ করেছেন। ক্বাবা শরীফও একটি উছিলা বা মাধ্যম। 

❏ধর্মকে চেনা ও জানার জন্য কিতাব দিয়েছেন। এই কিতাবও ইসলামকে জানার ও আল্লাহকে পাবার মাধ্যম। 

❏কিতাবগুলো আমাদের পর্যন্ত পৌঁছে দিতে অনেক আলেম উছিলা হয়েছেন। 

❏আল্লাহই সব কিছু করেন।তবে দুনিয়ায় অনেক কার্য সিদ্ধ করতে মানুষ উছিলা হয়।

❏যারা উছিলাকে হারাম বলে চিল্লাইয়া গলা ফাটাতে ভালোবাসেন তাদের সবাই ফেসবুক ও ইউটিউবের উছিলায় নিজেকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন এবং জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করছেন।

  তারপরও যদি উছিলা হারাম ও শিরক হয়ে যায় তবে,উল্লেখিত সব গুলো পয়েন্টই হারাম ও শিরক হয়ে যায়।পাশাপাশি পবিত্র কোরআন থেকে সুরা মায়েদার ৩৫ নম্বর আয়াতটাকে ডিলিট করে দিতে হয়।জানি, তারপরেও উছিলার কথা বললে আপনি বলবেন "মাজার পূজারী"!আপনার অন্ধ চোখটাতে স্কচটেপ লাগিয়ে সিলগালা করে দিয়েছে কিছু মোল্লা মুন্সি। তাই চোখের সামনের বাস্তবতাকেও দেখতে পান না।এবার পবিত্র কোরআনে অন্ধ বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে সেটা আপনি না বুঝলেও জ্ঞানীরা অবশ্যই বুঝবে।

মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

প্রশ্ন-১



প্রশ্নঃ করোনা ভাইরাস কিংবা যেকোন মহামারী পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে মসজিদ বন্ধ করে দেয়া কি ইসলাম সম্মত?


 উত্তরঃ মুসলমানদের জীবন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ পাক কিংবা উনার প্রিয় হাবীব(স) এর শিক্ষা এই নয় যে মুসলমানরা তাদের জীবনকে বিপদের মুখে ফেলে দিবে । বরং নবী করিম(স) এর বর্ণিত হাদিস শরীফের মাধ্যমে আমরা অবগত হই যে, যেকোনো মহামারী পরিস্থিতিতে তিনি মুসলমানদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে ইবাদত করার কিংবা নামাজ পড়ার আদেশ দিয়েছেন । আমরা অনেকেই আবেগের বশে মসজিদ বন্ধ থাকাকে মেনে নিতে পারি না। কিন্তু পরিস্থিতি সাপেক্ষ এটাই রাসূল(স) এর আদেশ । তাই করোনায় মতো কঠিন মহামারী পরিস্থিতিতে মসজিদ বন্ধ থাকা ইসলাম বিরোধী নয়।ইসলাম বিরোধী হবে যদি নামাজ পড়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।                                                                    

বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ইসলামিক কবিতা-২


বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা

     কাজী নজরুল ইসলাম 



বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা

শির উঁচু করি মুসলমান।

দাওয়াত এসেছে নয়া যমানার

ভাঙ্গা কেল্লায় ওড়ে নিশান।।


মুখেতে কালেমা হাতে তলোয়ার,

বুকে ইসলামী জোশ দুর্বার,

হৃদয়ে লইয়া এশক আল্লাহর

চল আগে চল বাজে বিষান।

ভয় নাই তর গলায় তাবিজ

বাঁধা যে রে তোর পাক কোরান।।


নহি মোরা জীব ভোগ- বিলাসের,

শাহাদাত ছিল কাম্য মোদের,

ভিখারির সাজে খলীফা যাদের

শাসন করিল আধা জাহান-

তারা আজ পড়ে ঘুমায়ে বেহুঁশ

বাহিরে বহিছে ঝড় তুফান।।


ঘুমাইয়া কাজা করেছি ফজর,

তখনো জাগিনি যখন যোহর,

হেলা ও খেলায় কেটেছে আসর

মাগরিবের আজ শুনি আজান।

জামাত শামিল হওরে এশাতে

এখনো জমাতে আছে স্থান।।


শুকনো রুটিকে সম্বল ক’রে

যে ঈমান আর যে প্রানের জোরে

ফিরেছে জগত মন্থন ক’রে

সে শক্তি আজ ফিরিয়ে আন।

আল্লাহ আকবর রবে পুনঃ

কাঁপুক বিশ্ব দূর বিমান।।

ইসলামিক কবিতা-১


 


উমর ফারুক 

 – কাজী নজরুল ইসলাম

তিমির রাত্রি –‘এশা’র আজান শুনি দূর মসজিদে
প্রিয়া-হারা কান্নার মতো এ-বুকে আসিয়া বিঁধে!
আমির-উল-মুমেনিন,
তোমার স্মৃতি যে আজানের ধ্বনি – জানে না মুয়াজ্জিন!
তকবির শুনি শয্যা ছাড়িয়া চকিতে উঠিয়া বসি,
বাতায়নে চাই – উঠিয়াছে কি রে গগনে মরুর শশী?
ও-আজানা ও কি পাপিয়ার ডাক, ও কি চকোরীর গান?
মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ও কি ও তোমারই সে আহ্বান?
আবার লুটায়ে পড়ি!


‘সেদিন গিয়াছে’–শিয়রের কাছে কহিছে কালের ঘড়ি!
উমর! ফারুক! আখেরি নবির ওগো দক্ষিণ-বাহু!
আহ্বান নয় – রূপ ধরে এসো! – গ্রাসে অন্ধতা-রাহু
ইসলাম-রবি, জ্যোতি আজ তার দিনে দিনে বিমলিন!
সত্যের আলো নিভিয়া – জ্বলিছে জোনাকির আলো ক্ষীণ!
শুধু অঙ্গুলি-হেলনে শাসন করিতে এ জগতের
দিয়াছিলে ফেলি মুহম্মদের চরণে যে-শমশের,
ফিরদৌস ছাড়ি নেমে এসো তুমি সেই শমশের ধরি,
আর একবার লোহিত-সাগরে লালে লাল হয়ে মরি!
নওশার বেশে সাজাও বন্ধু মোদের পুনর্বার
খুনের সেহেরা পরাইয়া দাও হাতে বাঁধি হাতিয়ার!
দেখাইয়াদাও – মৃত্যু যথায় রাঙা দুলহিন৬ -সাজে
করে প্রতীক্ষা আমাদের তরে রাঙা রণ-ভূমি মাঝে!
মোদের ললাট-রক্তে রাঙিবে রিক্ত সিঁথি তাহার,
দুলাব তাহার গলায় মোদের লোহু-রাঙা তরবার!
সেনানী! চাই হুকুম!


সাত সমুদ্র তেরো নদী পারে মৃত্যু-বধূর ঘুম
টুটিয়াছে ওই যক্ষ-কারায় সহে নাকো আর দেরি,
নকিব কণ্ঠে শুনবি কখন নব অভিযান ভেরি!…
নাই তুমি নাই, তাই সয়ে যায় জমানার অভিশাপ,
তোমার তখ‍্‍তে বসিয়া করিছে শয়তান ইনসাফ !
মোরা ‘আসহাব-কাহাফের’ মতো দিবানিশি দিই ঘুম,
‘এশা’র আজান কেঁদে যায় শুধু – নিঃঝুম নিঃঝুম!

কত কথা মনে জাগে,
চড়ি কল্পনা-বোররাকে যাই তেরশো বছর আগে
যেদিন তোমার প্রথম উদয় রাঙা মরু-ভাস্কর,
আরব যেদিন হল আরাস্তা, মরীচিকা সুন্দর।
গোষ্ঠে বসিয়া বালক রাখাল মহম্মদ সেদিন
বারে বারে কেন হয়েছে উতলা! কোথা বেহেশ‍্‍তি বীণ
বাজিতেছে যেন! কে যেন আসিয়া দাঁড়িয়েছে তাঁর পিছে,
বন্ধু বলিয়া গলা জড়াইয়া কে যেন সম্ভাষিছে!

মানসে ভাসিছে ছবি –
হয়তো সেদিন বাজাইয়া বেণু মোদের বালক নবি
অকারণ সুখে নাচিয়া ফিরেছে মেষ-চরণের মাঠে!‌
খেলায়েছে খেলা বাজাইয়া বাঁশি মক্কার মরু বাটে!
খাইয়াছে চুমু দুম্বা শিশুরে জড়াইয়া ধরি বুকে,
উড়ায়ে দিয়েছে কবুতরগুলি আকাশে অজানা সুখে!
সূর্য যেন গো দেখিয়াছে – তার পিছনে অমারাতি
রৌশন-রাঙা করিছে কে যেন জ্বালায়ে চাঁদের বাতি।
উঠেছিল রবি আমাদের নবি, সে মহা-সৌরলোকে,
উমর, একাকী তুমি পেয়েছিলে সে আলো তোমার চোখে!
কে বুঝিবে লীলা-রসিকের খেলা! বুঝি ইঙ্গিতে তার
বেহেশ‍্‍ত-সাথি খেলিতে আসিলে ধারার পুনর্বার।
তোমার রাখাল-দোস্তের মেষ চরিত সুদূর গোঠে,
হেথা ‘আজনান’ -ময়দানে তব পরাণ ব্যথিয়া ওঠে!
কেন কার তরে এ প্রাণ-পোড়ানি নিজেই জান না বুঝি,
তোমার মাঠের উটেরা হারায়, তুমি তা দেখ না খুঁজি!
ইহারাই মাঝে বা হয়তো কখন দুঁহুঁ দোঁহা দেখেছিলে,
খেজুর-মেতির গল-হার যেন বদল করিয়া নিল,
হইলে বন্ধু মেষ-চারণের ময়দানে নিরালয়,
চকিত দেখায় চিনিল হৃদয় চির-চেনা আপনায়!
খেলার প্রভাত কাটিল কখন, ক্রমে বেলা বেড়ে চলে,
প্রভাতের মালা শুকায়ে ঝরিল খর মরু বালুতলে।
দীপ্ত জীবন মধ্যাহ্নের রৌদ্র তপ্ত পথে
প্রভাতের সখা শত্রুর বেশে আসিল রক্ত-রথে।
আরবে সেদিন ডাকিয়াছে বান, সেদিন ভূবন জুড়ি,
‘হেরা’-গুহা হতে ঠিকরিয়া ছুটি মহাজ্যোতি বিচ্ছুরি!
প্রতীক্ষমাণ তাপসী ধরণি সেদিন শুদ্ধস্নাতা
উদাত্ত স্বরে গাহিতেছিল গো কোরাণের সাম-গাথা!
পাষাণের তলে ছিল এত জল, মরুভূমে এত ঢল?
সপ্ত সাগর সাতশত হয়ে যেন করে টলমল!
খোদার হাবিব এসেছে আজিকে হইয়া মানব-মিতা,
পুণ্য-প্রভায় ঝলমল করে ধরা পাপ-শঙ্কিতা ।
সেদিন পাথারে উঠিল যে মৌজ তাহারে শাসন-হেতু
নির্ভীক যুবা দাঁড়াইলে আসি ধরি বিদ্রোহ-কেতু!

উদ্ধত রোষে তরবারি তব ঊর্দ্ধে আন্দোলিয়া
বলিলে, “রাঙাবে এ তেগ মুসলমানের রক্ত দিয়া !”
উন্মাদ বেগে চলিলে ছুটিয়া! – একী এ কী ওঠে গান?
এ কোন লোকের অমৃত মন্ত্র? কার মহা আহ্বান?
ফতেমা – তোমার সহোদরা – গাহে কোরান-অমিয়-গাথা,
এ কোন মন্ত্রে চোখে আসে জল, হায় তুমি জান না তা!
উন্মাদ-সম কেঁদে কও, “ওরে, শোনা পুন সেই বাণী!
কে শিখাল তোরে এ গান সে কোন বেহেশ‍্‍তে আনি
এ কী হল মোর? অভিনব এই গীতি শুনি হায় কেন
সকল অঙ্গ শিথিল হইয়া আসিছে আবেশে যেন!
কী যেন পুলক কী যেন আবেগ কেঁপে উঠি বারে বারে,
মানুষের দুঃখে এমন করিয়া কে কাঁদিছে কোন পারে?”

“আশহাদু আন-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” বলি
কহিল ফাতেমা–“এই যে কোরান, খোদার কালাম গলি
নেমেছে ভুবনে মহম্মদের অমর কণ্ঠে, ভাই!
এই ইসলাম, আমরা ইহারই বন্যায় ভেসে যাই!”…
উমর আনিল ইমান। – গরজি গরজি উঠিল স্বর
গগন পবন মন্থর করি –“আল্লাহু আকবর!”
সম্ভ্রমে-নত বিশ্ব সেদিন গাহিল তোমার স্তব –
“এসেছেন নবি, এত দিনে এল ধরায় মহামানব!”

পয়গম্বর রবি ও রুসল – এঁরা তো খোদার দান!
তুমি রাখিয়াছ, হে অতি-মানুষ, মানুষের সম্মান!
কোরান এনেছে সত্যের বাণী, সত্যে দিয়াছে প্রাণ,
তুমি রূপ – তব মাঝে সে সত্য হয়েছে অধিষ্ঠান।

ইসলাম দিল কি দান বেদনা-পীড়িত এ ধরণিরে,
কোন নব বাণী শুনাইতে খোদা পাঠাল শেষ নবিরে, –
তোমারে হেরিয়া পেয়েছি জওয়াব সেসব জিজ্ঞাসার!
কী যে ইসলাম, হয়তো বুঝিনি, এইটুকু বুঝি তার
উমর সৃজিতে পারে যে ধর্ম, আছে তার প্রয়োজন!
ওগো, মানুষের কল্যাণ লাগি তারই শুভ আগমন
প্রতীক্ষায় এ দুঃখিনী ধরা জাগিয়াছে নিশিদিন
জরা-জর্জর সন্তানে ধরি বক্ষে শান্তিহীন!
তপস্বিনীর মতো
তাহারই আশায় সেধেছে ধরণি অশেষ দুখের ব্রত।
ইসলাম – সে তো পরশ-মাণিক তারে কে পেয়েছে খুঁজি!
পরশে তাহার সোনা হল যারা তাদেরেই মোরা বুঝি।
আজ বুঝি – কেন কেন বলিয়াছিলেন শেষ পয়গম্বর –
“মোর পরে যদি নবি হত কেউ, হত সে এক উমর!”

পাওনিকো ‘ওই’, হওনিকো নবি, তাইতো পরান ভরি
বন্ধু ডাকিয়া আপনার বলি বক্ষে জড়ায়ে ধরি!
খোদারে আমরা করি গো সেজদা, রসুলে করি সালাম,
ওঁরা ঊর্ধ্বের, পবিত্র হয়ে নিই তাঁহাদের নাম,
তোমারে স্মরিতে ঠেকাই না কর ললাটে ও চোখে-মুখে
প্রিয় হয়ে আছ তুমি হতমান মানুষ জাতির বুকে।
করেছ শাসন অপরাধীদের তুমি করনিকো ক্ষমা,
করেছ বিনাশ অসুন্দরের। বলনিকো মনোরমা।
মিথ্যাময়ীরে। বাঁধনিকো বাসা মাটির ঊর্ধ্বে উঠি।
তুমি খাইয়াছ দুঃখীর সাথে ভিক্ষার খুদ খুঁটি!

অর্ধ পৃথিবী করেছ শাসন ধুলার তখ‍তে বসি
খেঁজুর পাতার প্রাসাদ তোমার বারে বারে গেছে খসি
সাইমুম-ঝড়ে। পড়েছে কুঠির, তুমি পড়নিকো নুয়ে,
ঊর্ধ্বের যারা – পড়েছে তাহারা, তুমি ছিলে খাড়া ভুঁয়ে!
শত প্রলোভন বিলাস বাসন ঐশ্বর্যের মদ
করেছে সালাম দূর হতে সব, ছুঁইতে পারেনি পদ।
সবারে ঊর্ধ্বে তুলিয়া ধরিয়া তুমিছিলে সব নিচে,
বুকে করে সবে বেড়া করি পার, আপনি রহিলে পিছে!

হেরি পশ্চাতে চাহি –
তুমি চলিয়াছ রৌদ্রদগ্ধ দূর মরুপথ বাহি
জেরুজালেমের কিল্লা যথায় আছে অবরোধ করি
বীর মুসলিম সেনা দল তব বহু দিন মাস ধরি।
দুর্গের দ্বার খুলিবে তাহারা, বলেছে শত্রু শেষে –
উমর যদি গো সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করে এসে।
হায় রে আধেক ধরার মালিক আমিরুল-মুমেনিন
শুনে সে খবর একাকী উষ্ট্রে চলেছে বিরামহীন
সাহারা পারায়ে! ঝুলিতে দুখানা শুকনো ‘খবুজ’ রুটি,
একটি মশকে একটুকু পানি খোর্মা দু-তিন মুঠি!
প্রহরীবিহীন সম্রাট চলে একা পথে উটে চড়ি
চলিছে একটি মাত্র ভৃত্য উষ্টের রশি ধরি!
মরুর সূর্য ঊর্ধ্ব আকাশে আগুন বৃষ্টি করে,
সে আগুন-তাতে খই সম ফোটে বালুকা মরুর পরে।
কিছুদূর যেতে উট হতে নামি কহিলে ভৃত্যে, “ভাই
পেরেশান বড়ো হয়েছে চলিয়া! এইবার আমি যাই
উষ্ট্রের রশি ধরিয়া অগ্রে, তুমি উঠে বসো উটে ;
তপ্ত বালুতে চলি যে চরণে রক্ত উঠেছে ফুটে!”

…ভৃত্য দস্ত চুমি
কাঁদিয়া কহিল “উমর! কেমনে এ আদেশ করো তুমি?
উষ্ট্রের পিঠে আরাম করিয়া গোলাম রহিবে বসি
আর হেঁটে যাবে খলিফা উমর ধরি সে উটের রশি”
খলিফা হাসিয়া বলে,
“তুমি জিতে গিয়ে বড়ো হতে চাও, ভাই রে এমনই ছলে!
রোজ-কিয়ামতে আল্লা যেদিন কহিবে “উমর! ওরে,
করেনি খলিফা মুসলিম-জাঁহা তোর সুখ তরে তোরে!”
কী দিব জওয়াব, কি করিয়া মুখ দেখাব রসুলে ভাই?
আমি তোমাদের প্রতিনিধি শুধু! মোর অধিকার নাই
আরাম সুখের, – মানুষ হইয়া নিতে মানুষের সেবা!
ইসলাম বলে সকলে সমান, কে বড়ো ক্ষুদ্র কেবা!
ভৃত্য চড়িল উটের পিঠে উমর ধরিল রশি,
মানুষে স্বর্গে তুলিয়া ধরিয়া ধুলায় নামিল শশী
জানি না, সেদিন আকাশে পুষ্পবৃষ্টি হইল কিনা,
কী গান গাহিল মানুষে সেদিন বন্দি বিশ্ববাণী!
জানি না, সেদিন ফেরেশতা তব করেছে কি না স্তব, –
অনাগত কাল গিয়েছিল শুধু, “জয় জয় হে মানব!”…

আসিলে প্যালেস্টাইন, পারায়ে দুস্তর মরুভূমি,
ভৃত্য তখন উটের উপরে, রশি ধরে চল তুমি!
জর্ডন নদী হও যবে পার, শত্রুরা কহে হাঁকি –
“যার নামে কাঁপে অর্ধ পৃথিবী, এই সেই উমর নাকি?”
খুলিল রুদ্ধ দূর্গা-দুয়ার! শত্রুরা সম্ভ্রমে
কহিল –“খলিফা আসেনি, এসেছে মানুষ জেরুজালমে!”
সন্ধিপত্র স্বাক্ষর করি শত্রু-গির্জা-ঘরে
বলিলে, “বাহিরে যাইতে হইবে এইবার নামাজ তরে!”
কহে পুরোহিত, “আমাদের এই আঙিনায় গির্জায়,
পড়িলে নামাজ হবে না কবুল আল্লার দরগায় ?”

হাসিয়া বলিলেন, “তার তরে নয়, আমি যদি হেথা আজ
নামাজ আদায় করি, তবে কাল অন্ধ লোক-সমাজ
ভাবিবে – খলিফা করেছে ইশারা হেথায় নামাজ পড়ি
আজ হতে যেন এই গির্জারে মোরা মসজিদ করি!
ইসলামের এ নহেকো ধর্ম, নহে খোদার বিধান,
কারও মন্দির গির্জারে করে মজিদ মুসলমান!”
কেঁদে কহে যত ইসাই ইহুদি অশ্রু সিক্ত আঁখি –
“এই যদি হয় ইসলাম – তবে কেহ রহিবেনা বাকি,
সকলে আসিবে ফিরে
গণতন্ত্রের ন্যায় সাম্যের শুভ্র এ মন্দিরে!”
তুমি নির্ভীক এ খোদা ছাড়া করনিকো কারে ভয়
সত্যব্রত তোমায় তাইতে সবে উদ্ধত কয়।
মানুষ হইয়া মানুষের পূজা মানুষরই অপমান
তাই মহাবীর খালেদেরে তুমি পাঠাইলে ফরমান
সিপাহ-সালারে ইঙ্গিতে তব করিলে মামুলি সেনা,
বিশ্ব-বিজয়ী বীরেরে শাসিতে এতটুকু টলিলে না।
ধরাধাম ছাড়ি শেষ নবী যবে করিল মহাপ্রয়াণ,
কে হবে খালিফা – হয়নি তখনও কলহের অবসান,
নব-নন্দনী বিবি ফাতেমার মহলে আসিয়া সবে
করিতে লাগিল জটলা – ইহার পরে কে খালিফা হবে!
বজ্রকণ্ঠে তুমিই সেদিন বলিতে বলিতে পারিয়াছিলে –
“নবিসূতা! তবে মহল জ্বালাব, এ সভা ভেঙে না দিলে!”

মানব-প্রেমিক! আজিকে তোমারে স্মরি,
মনে পড়ে যত মহত্ত্ব-কথা – সেদিন সে বিভাবরী
নগর-ভ্রমণে বাহিরিয়া তুমি দেখিতে পাইলে দূরে
মায়েরে ঘিরিয়া ক্ষুধাতুর দুটি শিশু সকরুণ সুরে
কাঁদিতেছে আর দুঃখিণী মাতা ছেলেরে ভুলাতে, হায়,
উনানে শূণ্য হাঁড়ি চড়াইয়া কাঁদিয়া অকূলে চায়!
শুনিয়া সকল – কাঁদিতে কাঁদিতে ছুটে গেলে মদিনাতে
বয়তুল-মাল হইতে লইয়া ঘৃত আটা নিজ হাতে,
বলিলে, “এসব চাপাইয়া দাও আর পিঠের পরে,
আমি লয়ে যাব বহিয়া এ-সব দুখিনী মায়ের ঘরে।”
কত লোক আসি আপনি চাহিল বহিতে তোমার বোঝা,
বলিলে, “বন্ধু, আমার এ ভার আমিই বহিব সোজা!
রোজ-কিয়ামতে কে বহিবে বলো আমার পাপের ভার?
মম অপরাধে ক্ষুধায় শিশুরা কাঁদিয়াছে, আজই তার
প্রায়শ্চিত্ত করিব আপনি!” – চলিলে নিশীথ রাতে
পৃষ্ঠে বহিয়া খাদ্যের বোঝা দুখিনীর আঙিনাতে –

এত যে কোমল প্রাণ,
করুণার বশে তবু গো ন্যায়ের করনিকো অপমান!
মদ্যপানের অপরাধে প্রিয় পুত্রেরে নিজ করে
মেরেছ দোররা, মরেছে পুত্র তোমার চোখের পরে।
ক্ষমা চাহিয়াছে পুত্র, বলেছ পাষাণে বক্ষ বাঁধি –
“অপরাধ করে তোরই মত স্বরে কাঁদিয়াছে অপরাধী!”
আবু শাহমার গোরে
কাঁদিতে যাইয়া ফিরিয়া আসি গো তোমারে সালাম করে।

খাস দরবার ভরিয়া গিয়াছে হাজার দেশের লোকে,
‘কোথায় খলিফা’ কেবলই প্রশ্ন ভাসে উৎসুক চোখে,
একটি মাত্র পিরান কাচিয়া শুকায়নি তাহা বলে
রৌদ্রে ধরিয়া বসিয়া আছে গো খলিফা আঙিনা-তলে!
… হে খলিফাতুল-মুসলেমিন! হে চীরধারী সম্রাট!
অপমান তব করিব না আজ করিয়া নান্দী পাঠ,
মানুষেরে তুমি বলেছ বন্ধু, বলিয়াছ ভাই, তাই
তোমারে এমন চোখের পানিতে স্মরি গো সর্বদাই!
বন্ধু গো, প্রিয়, এ হাত তোমারে সালাম করিতে গিয়া
ওঠে না ঊর্ধ্বে, বক্ষে তোমারে ধরে শুধু জড়াইয়া!…

মাহিনা মোহররম –
হাসেন হোসেন হয়েছে শহিদ, জানে শুধু হায় কৌম,
শহিদি বাদশা! মোহর্‌রমে যে তুমিও গিয়াছ চলি
খুনের দরিয়া সাঁতারি – এজাতি গিয়াছে গো তাহা ভুলি!
মোরা ভুলিয়াছি, তুমি তো ভোলনি! আজও আজানের মাঝে
মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে বন্ধু, তোমারই কাঁদন বাজে
বন্ধু গো জানি, আমাদের প্রেমের আজও ও গোরের বুকে
তেমনি করিয়া কাঁদিছ হয়তো কত না গভীর দুখে‌!
ফিরদৌস হতে ডাকিছে বৃথাই নবি পয়গম্বর,
মাটির দুলাল মানুষের সাথে ঘুমাও মাটির পর!
হে শহিদ! বীর! এই দোয়া কর আরশের পায়া ধরি –
তোমারই মতন মরি যান হেসে খুনের সেহেরা পরি।

মৃত্যুর হতে মরিতে চাহি না, মানুষের প্রিয় করে
আঘাত খাইয়া যেন গো আমার শেষ নিঃশ্বাস পড়ে!

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০২০

মহররমে কেন শোক পালন করবেন?

মহররমে কেন শোক পালন করবেন? 


      আমাদের প্রিয় দো-জাহানের বাদশা নবী করিম(স) উনার উম্মতের কাছে একটি বিনিময় চেয়েছেন।আর তা হলো, উনার পবিত্র আহলে বাইতকে ভালোবাসতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,

   
সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২৩

ذَٰلِكَ ٱلَّذِى يُبَشِّرُ ٱللَّهُ عِبَادَهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ قُل لَّآ أَسْـَٔلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا ٱلْمَوَدَّةَ فِى ٱلْقُرْبَىٰ وَمَن يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهُۥ فِيهَا حُسْنًا إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ شَكُورٌ
অর্থঃ এরই সুসংবাদ দেন আল্লাহ তার সেসব বান্দাকে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে। বলুন, আমি আমার ধর্মের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কেবল আহলে বাইতের প্রতি মোহাব্বত চাই। যে কেউ উত্তম কাজ করে, আমি তার জন্যে তাতে পুণ্য বাড়িয়ে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী, গুণগ্রাহী।

  উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহর রাসূল(স) উনার উম্মতের প্রতি একটি বিনিময়ই কেবল চেয়েছেন।আমরা এই বিনিময় কতটুকু দিতে সমর্থ হয়েছি?উপরন্তু প্রিয় নবীজীর আহলে বাইতের পবিত্র রক্ত মোবারকে কারবালার প্রান্তর রঞ্জিত করেছে ইয়াজিদের বাহিনী।সমাজে আজও ইয়াজিদের বাহিনী বিদ্যমান।তারা সহিহ আকিদা,সহিহ হাদিস বলে গলা শুকাতে ভুল করে না।কিন্তু প্রিয় নবীজী(স) এর চাওয়া এই একটা মাত্র বিনিময় দিতে তারা ভুলে যায়। বরং ইয়াজিদের গুণকীর্তন করে তাদের সময় কাটে।ইয়াজিদের গুণগ্রাহী আলেমদের প্রতি সাধারণ মানুষও আজ আকৃষ্ট।তার কারন হলো আমাদের ঈমান ও আমল ঠিক নেই। 

       এবার আসি প্রিয় নবীজী(স) কে ভালোবাসার একটি উদাহরনের দিকে।তার আগে জানতে চাই,পবিত্র কোরআনের কোন আয়াতে অথবা কোন হাদিসে ঈমানদারদের এমন আদেশ দেয়া হয়েছে যেন তারা নিজেদের দাত ফেলে দেয়? তাহলে হযরত উয়ায়েস করনী(রহঃ) কেন রাসূল(স) এর দন্ত মোবারক শহীদ হওয়ার খবর পেয়ে নিজের সমস্ত দাঁত গুলো নিজেই ফেলে দিলেন?আর রাসূল(স) ই কেন হযরত উয়ায়েস করনী(রহঃ) এর জন্য নিজের খেরকা মোবারক পাঠিয়ে দিলেন?মদীনায় বসে কিভাবে রাসূল(স) উনার এমন আশেকের খবর জানলেন?এমন কোন দলিল কি আছে যেখানে বলা আছে রাসূল(স) উনার এই সুমহান আশেকের সংবাদ দুনিয়ার কোন ব্যক্তি মারফত পেয়েছেন? না নেই।বরং তিনিই দুনিয়ার মানুষদের কাছে উনার এই সুমহান আশেকের খবর জানিয়ে গেছেন।  

     এই ঘটনা গুলো আসলে কি প্রমাণ করে?ভালোবাসা অন্তর থেকে সৃষ্টি হয়।আশেকের অন্তরে ভালোবাসার যে আগুন তার জন্য আলাদা কোন দলিল লাগে না।সবাই উয়ায়েস করনী(রহঃ) হতে পারবে না। কিন্তু সবার উচিত ভালোবাসার এই অনুপম দৃষ্টান্ত গুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে রাসূল(স) কে ভালোবাসার চেষ্টা করা।তবে হ্যা,নবী(স) কে ভালোবাসার দলিল আছে, নবী করিম(স) এর আহলে বাইতকে ভালোবাসার দলিল আছে। আর নবী করিম(স) কে কিভাবে ভালোবাসতে হবে তার উদাহরণও আছে। এমনই এক উদাহরণ হলো হযরত ওয়ায়েস কারনী(রহঃ)।আর নবী করিম(স) যে এলেমে গায়েব জানতেন তারই এক উদাহরণ হলো তিনি মদীনায় বসেও উনার আশোক ওয়ায়েস করনী(রহঃ) এর খবর রাখেন।

    নবী করিম(স) এর এই সুমহান আশেক ওয়ায়েস করনী(রহঃ) নবীজীর একটি দন্ত মোবারক শহীদ হওয়ায় নিজের সমস্ত দন্ত মোবারক ফেলে দিলেন।আর নবী করিম(স) এর কলিজার টুকরা ইমাম হোসাইন(আ) যখন কারবালায় স্বপরিবারে শহীদ হলেন তখন আশেকের অন্তরে কি একটুও কষ্ট লাগবে না?নবী পরিবারের ৭২ জন  সদস্যদের পবিত্র রক্ত মোবারকে যখন বন্যা বয়ে গেল তখন আপনি আমি কেমন ভালোবাসার দাবিদার যে তাতে আমাদের  একটুও কষ্ট হয় না?ইমাম হোসাইন(আ) কে ভালোবাসলে এক দল শিয়া বলে চিৎকার করে।আর জান্নাতের এই সর্দারকে ভালো না বাসলে  কি ঈমানদার হওয়া যায়?কারবালার স্মৃতিকে ধামাচাপা দিতে আজ একদল বিক্রি হওয়া আলেম শোক পালনকে হারাম বলে।একটা পশুও তার আপনজনকে হারালে কষ্ট পায়।আর যে মানুষের মনুষ্যত্ব বলতে কিছু থাকবে সে কেন প্রিয় জন হারানোর বেদনায় ব্যথিত হবে না?আর এটা যদি হয় মর্মান্তিক তখন সে বেদনাতো আরো বেড়ে যায়।প্রিয় নবীজীর বংশের প্রায় সবাইকে শহীদ করার চেয়ে এই উম্মতের জন্য আরো বড় কষ্ট কি হতে পারে?পাষন্ড সীমার ছাড়া কার অন্তরে কষ্ট লাগবে না?মহররম শোকের মাস,১০ ই মহররম সৃষ্টি কূলের শোকের দিন।এই সেই দিন যেদিন  মহাবিশ্ব ধংস হয়ে যাবে। অতএব, ভয় করুন আপন প্রভুকে।জেনে রাখবেন, ইসমাইল(আ) কে কোরবানি করতে গিয়েও কোরবানি হয় নি।কারণ জীবন কোরবানি দিয়ে ধর্ম রক্ষা উনারই বংশধর ইমাম হোসাইন(আ) এর জন্য লিখা ছিল।আমরা কেবল ইসমাঈল(আ) এর পরিবর্তে পশু কোরবানিকে স্মরণ করতে জানি।কিন্তু ইসলামের জন্য নিজেদের নবীর পরিবারের এত সংখ্যক সুমহান ব্যক্তির জীবন কোরবানি দেওয়াকে স্মরণ করতে জানি না।আমাদের অনেকেই ৭২ জনকে শহীদ করে মাথা গেড়ে বসা বাতিল ৭২ ফেরকার অনুসারী হতে পছন্দ করে।সেই খুনিদের ঈমান ও আকিদা যাদের অন্তরে গেথে গেছে তারাই কারবালার স্মরণ থেকে বিমুখ হয়।তাদের অন্তরই হয় পাষন্ড সীমারের মতো যারা  কারবালার ঘটনায় শোকাহত হয় না।আফসোস, আমরা আবার নবীজীর উম্মত দাবি করি!!

এর নাম কি ইসলাম?

ধইরালা,কাইট্টালা,মাইরালা,জবাই কর,তুই বেদাতি, তুই মাজার পূজারী,তুই শিন্নী খোর-ইসলামে শিন্নী নিষেধ, তুই জিলাপি খোর-জিলাপি খাওয়া বেদাত -এসবের জ...